সোমবার; ১৪ এপ্রিল ২০২৫; ১ বৈশাখ ১৪৩২

বিড়ালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় রোবটের ব্যবহার ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

বিড়ালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় রোবটের ব্যবহার

মজিবুর রহমান

Published : ১১:৩১, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

এরিক ডস সান্তোস তার বিড়াল অটামকে খুব ভালোবাসেন, কিন্তু অটামের পটি পরিষ্কার করতে তার একদমই ভালো লাগে না। লস অ্যাঞ্জেলেসের এই মিডিয়া প্রযোজক, অন্যান্য বিড়ালপ্রেমীদের মতোই, সাধারণ প্লাস্টিকের লিটার বক্স আর চামচ ব্যবহার করতেন- যা তার কাছে ছিল একদম বীভৎস। তাই তিনি এ নিয়ে কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন। প্রায় পাঁচ বছর আগে, তিনি ৫৪৫ ডলার খরচ করে একটি স্বয়ংক্রিয় লিটার বক্স কিনলেন, যার নাম লিটার রোবট-৩। এরপর তিনি আপগ্রেড করে লিটার রোবট-৪ কিনেছেন, যার দাম প্রায় ৬৯৯ ডলার! এখন তার বাড়িতে দুটো রোবট লিটার বক্সই আছে, একটা পুরোনো, আরেকটা নতুন, আলাদা আলাদা জায়গায় রাখা।

তার কথায়, বিড়ালের পটি একটা ভয়ানক জিনিস, আর লিটার রোবট এটাকে একটু সহজ করে দেয়!

বিশ্বে এতসব ভয়াবহ ঘটনার মধ্যে বিড়ালের টয়লেট পরিষ্কার করা নিয়ে চিন্তা সত্যিই ছোটখাটো ব্যাপার। কিন্তু আমেরিকার ৪৫ দশমিক ৩ মিলিয়ন পরিবার যেখানে বিড়াল পোষে, সেখানে এটা একটা নিত্যদিনের সমস্যা। আর পোষা প্রাণির মালিকরা তো টাকা খরচ করতে কার্পণ্য করে না! মার্কিন পেট প্রোডাক্টস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর পোষা প্রাণির জিনিসপত্রের বাজার ছিল ১২৪ বিলিয়ন ডলারের!

রোবট দিয়ে বিড়ালের পটি পরিষ্কারের ব্যবসা

পোষা প্রাণীর পেছনে মানুষের টাকা খরচের প্রবণতা, রোবটিক ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের জনপ্রিয়তা এবং ঘরে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি এসবই হুইস্কারের ব্যবসা বাড়াতে সাহায্য করেছে। এই কোম্পানি লিটার রোবটের পাশাপাশি অটোমেটেড ফিডার এবং অন্যান্য পণ্য তৈরি করছে। তবে এই মার্কেটে হুইস্কার একা নয়। স্পেক্ট্রাম ব্র্যান্ডস, রেডিও সিস্টেমস-এর মতো বড় কোম্পানিগুলোও এই খাতে আছে, আর আছে চীনের সস্তা নকল পণ্য, যা কিনা যেকোনও কনজিউমার প্রোডাক্ট কোম্পানির জন্যই চ্যালেঞ্জ। 

তবুও মিশিগানের অবার্ন হিলসভিত্তিক হুইস্কার দ্রুত বাড়ছে। গত বছর তাদের আয় ছিল ১৫০ মিলিয়ন ডলার, যা ২০১৫ সালের ৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলারের তুলনায় ২০ গুণ বেশি! এবছর তারা ১৮০ মিলিয়ন ডলার বিক্রির টার্গেট করেছিল, যদিও নতুন পণ্য লঞ্চে কিছু গ্লিচের কারণে কাস্টমাররা ক্ষুব্ধ হয়েছিল এবং কোম্পানি বিক্রির গতি কমাতে বাধ্য হয়েছিল। এদিকে, তারা আরও টেক-সক্ষম পোষা প্রাণির পণ্য নিয়ে আসার পাশাপাশি তাদের ডিভাইস থেকে পাওয়া ডেটা ব্যবহার করে প্রাণীদের স্বাস্থ্য সমস্যা আগে থেকে শনাক্ত করার উপায় খুঁজছে। 

হুইস্কারের সিইও জ্যাকব জুপকে বলেন, আমরা পুরোনো ধাঁচে হার্ডওয়্যার ব্যবসা বাড়িয়েছি, লাভ দিয়ে ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়েছি। আমরা কখনোই বড় রিস্ক নিইনি যা কোম্পানিকে ঝুঁকিতে ফেলবে। জুপকে আগে ছিলেন একজন মার্কেটিং কনসালট্যান্ট এবং প্রতিষ্ঠাতা ব্র্যাড ব্যাক্সটারের সাথে কাজ করার পর এই বছর সিইও হয়েছেন। ব্যাক্সটার এখনও সবচেয়ে বড় শেয়ারহোল্ডার ৪৩ শতাংশ, আর জুপকের রয়েছে ৭ শতাংশ। বাকি ৫০ শতাংশ রয়েছে প্রাইভেট ইক্যুইটি ফার্ম পনডেরা হোল্ডিংসের নেতৃত্বে বিনিয়োগকারীদের হাতে। 

আই রোবটের সাফল্যের পথ অনুসরণ করতে হুইস্কার ২০২১ সালে তাদের সাবেক রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট প্রধান টিম সেগারকে বোর্ডে নিয়োগ দেয়। সেগার বলেন, আমার মনে হচ্ছে যেন ১৫ বছর আগের আই রোবটে চলে এসেছি!

ব্যাক্সটারের গল্প: বিড়ালের টয়লেট থেকে ব্যবসা

১৯৯৯ সালে, ব্যাক্সটার তার বেসমেন্টে দুই বিড়ালের টয়লেট পরিষ্কার করতে করতে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলেন। আমি বক্সটা পরিষ্কার করতে ভুলে যেতাম, আর বিড়ালরা প্রতিবাদ করে বক্সের বাইরে কাজ সারত! ফোর্ডে কাজ করা এই মেকানিক্যাল টিঙ্কারার নিজের সমস্যা সমাধানের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি লিটারমেইডের একটি সেলফ-ক্লিনিং বক্স কিনলেন, কিন্তু পদ্ধতিটি পছন্দ হল না, ময়লা শক্ত মতো জমে থাকত! তখন তার মাথায় আসে একটি স্ক্রিন দিয়ে পরিষ্কার বালি আলাদা করার আইডিয়া। পেটেন্ট সার্চ করে তিনি দেখলেন ডন রিটজ নামে একজন আগেই এই আইডিয়া নিয়ে কাজ করছে। শেষমেশ দুজনে মিলে লাইসেন্সিং ডিল করেন। 

ব্যাক্সটার তার বাবা জিম ব্যাক্সটারকে ৩৫ হাজার ডলার বিনিয়োগ করিয়ে প্রথম পণ্য বানান। লিটার রোবট এমন একটি ডিভাইস যেখানে বিড়াল ঢুকে কাজ সেরে বের হলে সেন্সর তা বুঝে নিয়ে ডিভাইসটি ঘুরে ময়লা আলাদা করে নিচের ড্রয়ারে ফেলে দেয়। 

শুরুতে এই ব্যবসাটি ব্যাক্সটারের জন্য লোকসানের গর্ত ছিল। প্রায় পাঁচ বছর পর আমার স্ত্রী আমার বুদ্ধির উপর সন্দেহ করতে শুরু করেছিলেন! তিনি হাসতে হাসতে বলেন। সেই সময়ে তিনি ৩ লাখ ৫০ হাজার ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছিলেন। প্লাস্টিক ম্যানুফ্যাকচারিং প্রক্রিয়ার সমস্যা ছিল, কিন্তু ব্যাংকগুলো তাকে লোন দিতে রাজি ছিল না। ৫০ হাজার ডলারের মোল্ডের কোনও মূল্য ব্যাংকের কাছে নেই! শেষমেশ তার অটোমোটিভ কানেকশন কাজে লাগিয়ে তিনি প্লাস্টিক সরবরাহকারীদের কাছ থেকে সুযোগ পেলেন। ২০০৫ সালে প্রক্রিয়া ঠিক করার পর থেকে কোম্পানি লাভ করতে শুরু করে। 

লাভ দিয়ে হুইস্কার নতুন ভার্সনের লিটার রোবট বাজারে আনে। ২০০৮ সালে তারা উইসকনসিনে ৩০ হাজার বর্গফুটের ফ্যাক্টরি নেয় জুপকে ২০১৫ সালে ডিজিটাল মার্কেটিং বাড়াতে যোগ দেন। ইনস্টাগ্রামে বিড়াল ইনফ্লুয়েন্সারদের দিয়ে হলিডে ক্যাম্পেইন চালিয়ে ওয়েব ট্রাফিক ১০ গুণ বাড়ানো হয়। 

২০১৯ সালে বিক্রি দাঁড়ায় ৪০ মিলিয়ন ডলার, আর পনডেরা ৩১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে। পনডেরার পার্টনার সেথ বারকেট বলেন, অ্যাপল বা ডাইসন যেমন কনজিউমার টেকনোলজিতে করেছে, আমরা পেট ইন্ডাস্ট্রিতে তা করতে চাই। 

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

প্যাকেজড ফ্যাক্টসের ২০২২ সালের সমীক্ষা বলছে, মাত্র ১২ শতাংশ পরিবার অটোমেটেড লিটার বক্স ব্যবহার করে। যারা কিনেছে, তাদের ৮ শতাংশ ১২ মাসের মধ্যে এবং ৭ শতাংশ দুই বছরের মধ্যে নতুন করে কিনেছে। তাই হুইস্কার এখন লিটার রোবটের বাইরেও অটোমেটেড ফিডার এবং ডেটা-ভিত্তিক সাবস্ক্রিপশন সার্ভিস নিয়ে কাজ করছে। যেমন, বিড়াল কতবার টয়লেট ব্যবহার করছে, তার প্যাটার্ন বদলালেই ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের লক্ষণ ধরা যেতে পারে। জুপকে বলেন, আমাদের লক্ষ্য পেট হেলথকেয়ারের ভবিষ্যৎ বদলে দেওয়া।

এমএএইচ

শেয়ার করুনঃ