সোমবার; ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪; ৮ পৌষ ১৪৩১

৫ হাজার ৫০০ বছর আগে যেভাবে জন্ম নিয়েছিল প্রথম লিখনশৈলী ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

৫ হাজার ৫০০ বছর আগে যেভাবে জন্ম নিয়েছিল প্রথম লিখনশৈলী

মজিবুর রহমান

Published : ১৩:০৯, ৯ নভেম্বর ২০২৪

ইতালির গবেষকরা মনে করছেন, বিশ্বের প্রাচীনতম লিখন পদ্ধতির কিছু প্রতীক সরাসরি সিলিন্ডার সিলের মোটিফ থেকে এসেছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, বিশ্বের প্রথম লিখন পদ্ধতির উৎপত্তি নিয়ে গবেষকরা বিভ্রান্ত ছিলেন। এখন, ইতালির গবেষকদের এক গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে যে, প্রাচীন সিলিন্ডার সিলের মোটিফ থেকেই এই প্রোটো-কিউনিফর্ম চিহ্নগুলোর কিছু সরাসরি উদ্ভব হতে পারে। 

গবেষণাটি অ্যান্টিকুইটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকরা প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার সিলগুলোতে খোদাই করা পৃথক প্রতীকগুলো চিহ্নিত করেছেন, যেগুলো মূলত পণ্য পরিবহন ও বাণিজ্য কার্যক্রমে ব্যবহৃত হতো এবং তাতে দেখানো হয়েছে কিভাবে সেগুলো প্রোটো-কিউনিফর্ম চিহ্নে রূপান্তরিত হয়েছে। এই সম্পর্ক শুধু লিখন উদ্ভবের উপর আলোকপাত করেনি বরং অনেক প্রোটো-কিউনিফর্ম চিহ্নের অর্থোদ্ধারে সাহায্য করতে পারে, যার বেশিরভাগই এখনও গবেষকদের কাছে রহস্য। 

বিশেষজ্ঞরা একমত যে, মেসোপটেমিয়ার সুমেরীয়রা চতুর্থ সহস্রাব্দে ইরাক অঞ্চলে কিউনিফর্ম পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছিল। এই লিখন পদ্ধতি পৃথিবীর প্রাচীনতম এবং মহাবিশ্বের প্রথম লিখন পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃত। এটি পরবর্তীতে আক্কাদীয়, ব্যাবিলনীয়, আসিরীয় ও হিট্টাইটদের মতো মেসোপটেমীয় সভ্যতাগুলোর মধ্যে বিস্তার লাভ করে এবং খ্রিস্টপূর্ব ১০০ অব্দ পর্যন্ত ব্যবহার করা হতো। 

প্রোটো-কিউনিফর্মের উৎপত্তি প্রাচীন হিসাবপদ্ধতি থেকে বলে অনেকেই মনে করতেন। এখন, ইতালির গবেষণা দল প্রস্তাব করেছেন, প্রোটো-কিউনিফর্মের কিছু প্রতীক সরাসরি প্রাচীন সিলিন্ডার সিলের মোটিফ থেকে উদ্ভূত। এই সিলগুলো মেসোপটেমিয়ায় উদ্ভাবিত হয়েছিল এবং সাধারণত কৃষি ও বস্ত্র বাণিজ্য ট্র্যাক করার জন্য ব্যবহৃত হতো। 

গবেষণার অংশীদার, ইউনিভার্সিটি অফ বোলোনিয়ার ভাষাবিদ সিলভিয়া ফেরারা বলেন, প্রাচীন সিলিং ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় লিখন পদ্ধতির উদ্ভবের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে স্বীকৃত, তবে বিশেষ সিলের প্রতীক ও চিহ্নের আকারের মধ্যে সম্পর্ক খুব কমই অনুসন্ধান করা হয়েছে। গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল এই চিহ্নগুলোতে শুধু আকার নয়, অর্থেরও মিল খুঁজে বের করা।

ফলাফলস্বরূপ, গবেষকরা এমন কিছু সিলের মোটিফ শনাক্ত করেছেন যা মুলত পানীয় পাত্র ও বস্ত্র পরিবহনের সাথে সম্পর্কিত ছিল এবং এগুলোকেই কিছু নির্দিষ্ট প্রোটো-কিউনিফর্ম চিহ্নের সরাসরি পূর্বসূরি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। 

সিলভিয়া ফেরারা বলেন, প্রাক-লিখন প্রতীকের সঙ্গে লিখন উদ্ভাবনের ধারণাগত ব্যবধান মানব মস্তিষ্কের প্রযুক্তিগত ক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নকে নির্দেশ করে। এই আবিষ্কার এই শূন্যতাকে পূরণ করে দেখায় যে প্রাক-ইতিহাসের কিছু প্রতীক কীভাবে প্রাচীনতম লিখন পদ্ধতির অংশে রূপান্তরিত হয়েছিল। 

এই আবিষ্কার লিখনশিল্পের জন্মসূত্র অনুসন্ধানের জন্য এক নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে।

এমএএইচ

শেয়ার করুনঃ