যেভাবে হারিয়ে যায় চলো, টিকে থাকে উবার
Published : ১৩:৪৮, ১০ জুলাই ২০২৪
২০১৩-২০১৪ সালের দিকে রাজধানীতে যাত্রা করে অ্যাপভিত্তিক অনডিমান্ড কার সার্ভিস চলো (চলো টেকনোলজিস লিমিটেড)। আর ২০১৬ সালের দিকে বাংলাদেশে আসে অ্যাপভিত্তিক ট্যাক্সি সেবা উবার।
উবার দেশে আসার ফলে বড় ধরনের এক প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হয় বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান চলো- যারা এমনটি ভাবছিলেন, তাদের বলি, এমনটা ঘটেনি।
চলোও উবারের মতোই পরিবহন খাতের সেবাভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান। দেশের পরিবহন ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করার এক সাহসী লক্ষ্য নিয়েই প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। যাত্রী হিসেবে কাউকে যেন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে না হয় সে ব্যাপারটিই নিশ্চিত করতে চেয়েছিলো প্রতিষ্ঠান দুটি।
চলোর মাধ্যমে যেকেউ ১০ মিনিটের মধ্যে গাড়ি পেতে পারত। অর্থাৎ চাওয়া মাত্রই গ্রাহকেরা গাড়ি পেয়ে যেতেন। সেজন্য পরিবহন নিয়ে বাড়তি চিন্তা করার কোনও প্রয়োজন ছিল না। এই প্রতিষ্ঠানের গাড়ি পেতে একটি অ্যাপ ব্যবহার করতে হতো। সেট ছিল চলোর নিজস্ব অ্যাপ।
জনগণের পূর্ণ সেবা দেওয়া ছিল চলোর অন্যতম আরেকটি লক্ষ্য। বাংলাদেশের গতানুগতিক সার্ভিসগুলো সেভাবে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে না বলে অনেকেরই অভিযোগ আছে। এ ধরনের সেবায় কিছু সাধারণ বিষয় যেমন- গাড়ির মধ্যে মিনারেল ওয়াটারের ব্যবস্থা, পত্রিকা, পর্যাপ্ত এসি, পরিচ্ছন্ন গাড়ি, চালকের সুন্দর ব্যবহার, আরামপ্রদতা ইত্যাদি বিষয়গুলো উপেক্ষিত থেকে যায় অথবা যা থাকে তা খুবই সাধারণ মানের হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে চলো ওপরের বিষয়গুলো ১০০ ভাগ নিশ্চিত করার চেষ্টা করে।
প্রতিষ্ঠানটির বর্তমানে সেবা প্রদানের পরিসর স্বল্প হলেও এর আওতা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা ছিল। চলোর ভবিষ্যত লক্ষ্য ছিল, বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষকে চাওয়ামাত্র যথাসময়ে গাড়ি সরবরাহ করা এবং আন্তর্জাতিকমানের সেবা প্রদান করা। এছাড়া এ সেবা সব ধরনের মানুষের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা।
চলো আমাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠান। সময়ের প্রেক্ষিতে উদ্যোগটিও বেশ সময়োপযোগী ছিল। তবে প্রতিযোগিতার এই বাজারে টিকতে হলে মানুষকে ভালো সেবা দিয়েই মন জয় করতে হবে। আর সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছিলো চলো। তারা বাংলাদেশে আসা একই খাতের সেবাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান উবারের মতো প্রচারণায় বেশি মনোযোগী না হয়ে মানুষকে সেবাদানেই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিল। চলো মনে করে, কেবল সেবার মাধ্যমেই প্রত্যেক মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছনো সম্ভব। সেবা ভালো হলে এমনিতেই মানুষ জানবে। সেক্ষেত্রে আলাদাভাবে প্রচারণার কোনও প্রয়োজন নেই।
উবারের প্রধান কার্যালয় যুক্তরাষ্ট্রের স্যান ফ্র্যান্সিসকোতে। অন্যসব পেশায় থেকেও সুবিধাজনক সময়ে ভাড়ায় গাড়ি চালিয়ে বাড়তি রোজগারের সুযোগ তৈরি হওয়া এবং যাত্রীদের জন্য সেবা পাওয়া সহজ হওয়ায় বিভিন্ন দেশে দারুণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে উবার।
পৃথিবীর অনেক দেশে সফলভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া এ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে নামে বড় পরিকল্পনা নিয়েই। এদের মার্কেটিং প্ল্যান ছিল দারুণ। তারা সার্ভিসটির প্রচারণা চালায় বিভিন্ন বিতর্ক আয়োজনের মধ্য দিয়ে। এছাড়া কৌশলী সংবাদ উপস্থাপন এবং বিজ্ঞাপনী সংস্থা নিয়োগ করে বিশাল সংখ্যক গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে চায় উবার। বলতে গেলে প্রচুর অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে প্রচারণার জন্য অভিনব সব কায়দাই গ্রহণ করে তারা।
তবে দুটি প্রতিষ্ঠানেরই সার্ভিস চালুর বিষয়ে এক জায়গায় মিল ছিল, এই সেবা চালু করতে প্রতিষ্ঠান দুটি দেশের রাস্তায় একটি গাড়িও নামায়নি। বরং যে গাড়িগুলো ছিল সেগুলোকে বিশেষভাবে ম্যানেজ করে নতুন ব্যবস্থাপনার মধ্যে আনে, মডেলটাই ছিল এমন।
সব প্রতিষ্ঠানেরই লক্ষ্য হলো গ্রাহকদের সন্তুষ্টি এবং বিশ্বাস অর্জন। আর এই পরিবহন খাতে প্রযুক্তিকে ভিত্তি করে চালু হওয়া দুটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের উবার এবং চলো পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সে লক্ষ্যগুলোই অর্জন করতে চায়। কিন্তু সেই দৌড়ে চলো টিকতে পারে না। রেসে পিছিয়ে পড়তে পড়তে দূর পেছনে পড়ে যায়।
চলো ছিল দেশীয় একটি প্রতিষ্ঠান, সিলিকন ভ্যালির একটি অফিস কক্ষে যে আইডিয়ার জন্ম। সিলিকন ভ্যালির ভেঞ্চার ক্যাপিটাল নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করলেও পরবর্তীতে জাপান ও তাইওয়ান থেকেও বিনিয়োগ পায় চলো। কিন্তু চলো চলে গেছে, টিকতে পারেনি। উবারের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় না পেরে একটি দেশীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে। চলো টিকতে না পারায় চলো বন্ধু, চলো ব্যাকপ্যাক নামের সেবাগুলো আর আলোর মুখ দেখেনি। দেশে কত প্রতিষ্ঠান আসে, আবার এভাবেই হারিয়ে যায়। কেন যায় তা নিয়ে কি কখনও গবেষণা হয়?
এমএএইচ