সোমবার; ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪; ৮ পৌষ ১৪৩১

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কর অব্যাহতি না দিলে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে দেশের অর্থনীতিতে রাসেল টি. আহমেদ

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কর অব্যাহতি না দিলে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে দেশের অর্থনীতিতে

ফয়সাল ইসলাম

Published : ১৮:০০, ২ জুন ২০২৪

আসন্ন বাজেটে (২০২৪-২৫) আইটি ও আইটিইএস খাতে কর অব্যাহতি থাকা না থাকা নিয়ে ধোঁয়াশা আছে। সরকার দীর্ঘদিন এই খাতে কর অব্যাহতি দিয়ে এলেও এবার এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে পারে। তবে এমনটা হলে তা আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি -সহ দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই।

 

সম্প্রতি এ বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) নববির্বাচিত সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেছেন, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক সব বাজারেই সম্ভবনার দিক দিয়ে এই ইন্ডাস্ট্রির অনেক দূরে যাওয়ার সক্ষমতা রয়েছে। তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের পুরো জার্নিটা আমরা দেখেছি। আর সেখানে বেসিস সদস্যদের ভূমিকা অনেকাংশেই বেশি ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।

 

দেশ এগিয়ে চলেছে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে। আর এই স্মার্ট বাংলাদেশে মানে যে শুধু আইসিটি তা নয়। এখানে কৃষি, শিক্ষা, ব্যাংকিং এবং তৈরি পোশাক খাত-সহ সব সেক্টরকেই একসঙ্গে স্মার্ট হওয়ার পথে এগিয়ে যেতে হবে। এই অগ্রযাত্রায়  থ্রি বাই থ্রি ফর্মুলার কথা বলেন রাসেল টি আহমেদ। এই ফর্মুলার তিন অংশীদার- সরকার ইন্ডাস্ট্রি ও একাডেমিয়া।

 

আইসিটি খাতে কর অব্যাহতি শেষ হতে যাচ্ছে এ বছর থেকে। কিন্তু এখনই এই অব্যাহতি না দিয়ে এটা অন্তত ২০৩১ সাল পর্যন্ত চলমান রাখার কথা বলেন তিনি। আবার সরকার এই অব্যাহতি চলমান রাখতে চাইলেও ২০২৬ সালে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন উপলক্ষে আইএমএফের যে প্রেসক্রিপশন আছে সেখানে হিসাবের জটিলতা তৈরি হয়েছে।

 

তবে আইএমএফের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী কর বসানো কোনোভাবেই উচিত হবে না বলে তিনি মনে করেন। এতে এই ইন্ডাস্ট্রির পুরো ইকো-সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অব্যাহতির বদলে বরং প্রণোদনা দেওয়া হোক বলে দাবি করেন তিনি।

 

এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একটি জরিপে দেখা গেছে এই শিল্পে টার্নওভার হয় ৫০ হাজার কোটি টাকা যা আরএমজি খাতের কাছাকাছি। অর্থাৎ এই কর অব্যাহতির কারণে ৫ হাজার কোটি টাকার ট্যাক্স পাচ্ছে না সরকার। কিন্তু এই হিসাবকে ভুল  আখ্যয়িত দিয়ে  রাসেল টি আহমেদ বলেন, এ ইন্ডাস্ট্রির রেভিনিউ হচ্ছে ২ হাজার কোটি টাকা। এটা এনবিআরের ভুল তথ্য। আমরা সেটা এনবিআরকে ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। দ্বিতীয়তআমাদের ইন্ডাস্ট্রির ওপর কর আরোপ করা হলে সেটা ২০০ কোটি টাকার বেশি হয় না। পরিমাণটি সরকারের মোট রাজস্ব আয়ের ১ শতাংশও না। কিন্তু এখানে যদি করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয় তাহলে সবগুলো সম্ভাবনা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

 

করারোপ হলে এর প্রভাব পড়বে বিভিন্নভাবে। কেননা স্মার্ট বাংলাদেশ প্রকল্পে সরকারের খরচ বাড়বে। তখন দেশি প্রতিষ্ঠানের বদলে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো টার্গেট করবে এতে আমাদের রফতানির বদলে আমদানির প্রতি ঝুঁকে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পুরো খাতটিই তাই ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে তিনি মনে করেন। অপরদিকে খরচ বেড়ে গেলে প্রতিযোগিতাতেও পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

 

এনবিআরের বিষয়ে রাসেল টি আহমেদ আরও বলেন, এনবিআর সবসময় তার এক বছরের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে থাকে। দীর্ঘমেয়াদী চিন্তা না করার কারণে ইন্ডাস্ট্রির ওপর তার অনেক বড় প্রভাব পড়ে। অপরদিকে সরকার যে ৫ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তা পূরণ করতে না পারার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেই তা পূরণ হয়ে যায় না। সেটা বাস্তবায়ন করতে হয়। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের পর পরিকল্পনার অভাব ছিল বলে তিনি মনে করেন। পরিকল্পনার পর তা বাস্তবায়ন করতে হয়এরপর মূল্যায়ন করতে হয়। কিন্তু আমাদের এখানে পরিকল্পনার পর তার বাস্তবায়ন আর মূল্যায়ন হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

 

এমএএইচ

শেয়ার করুনঃ