.png)

বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতের বাজার ২০১৭-২০৩১
Published : ১৭:২৪, ৮ এপ্রিল ২০২৫
আমিনুল হাকিম আম্বার আইটি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইআইজিএবি) বর্তমান সভাপতি। অপরদিকে তিনি সম্প্রতি বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরামের (বিআইজিএফ) চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। এর আগে তিনি দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি-তে একাধিকবারের সভাপতি ছিলেন। এছাড়ও বিভিন্ন সময়ের নির্বাহী কমিটিতে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। দীর্ঘদিন টেলিযোগাযোগ খাতে কর্মরত থাকায় কাছ থেকে দেখেছেন এই সেক্টরের যাত্রা, ক্ষেত্র তৈরি, উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ইত্যাদি। ভবিষ্যত গতিপথও তিনি দেখতে পারছেন। সেসব তিনি তুলে ধরছেন ধারাবাহিকভাবে টেকটক বিভাগে। আজ তার ষষ্ঠ পর্ব।
৩.২ রবি আজিয়াটা
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেড ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। রবি’র দুটি প্রধান স্টেকহোল্ডার মালয়েশিয়ার আজিয়াটা ৬১ দশমিক ৮২ শতাংশ, ভারতের ভারতী এয়ারটেলের ২৮ দশমিক ১৮ শতাংশ শেয়ারের মালিক এবং বাকি ১০ শতাংশ শেয়ার পুঁজি বাজারে তালিকাভুক্ত।
রবি আজিয়াটা লিমিটেড টেলিকম মালয়েশিয়া এবং বাংলাদেশের এ কে খান অ্যান্ড কোম্পানির মধ্যে একটি যৌথ উদ্যোগী সংস্থা হিসাবে শুরু হয়েছিল। এটি পূর্বে টেলিকম মালয়েশিয়া ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ লিমিটেড নামে পরিচিত ছিল যা ১৯৯৭ সালে 'একটেল' ব্র্যান্ড নামে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করে।২০০৮ সালে এ কে খান অ্যান্ড কোম্পানি ৩৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে জাপানের এনটিটি ডোকোমোর কাছে ৩০ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে ব্যবসা থেকে বেরিয়ে যায়। ২০১০ সালের ২৮ মার্চ 'একটেল' কে 'রবি' হিসাবে পুনরায় ব্র্যান্ডিং করা হয় যার বাংলা অর্থ "সূর্য"। ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি ঘোষণা করা হয় যে, রবি আজিয়াটা এবং এয়ারটেল বাংলাদেশ উভয় নেটওয়ার্কের সম্মিলিত প্রায় ৪০ মিলিয়ন (৪ কোটি) গ্রাহককে সেবা দেওয়ার জন্য রবি আজিয়াটা এবং এয়ারটেল বাংলাদেশ একীভূত হবে। রবি আজিয়াটা লিমিটেডের অবশিষ্ট শেয়ার ভারতী ইন্টারন্যাশনালের কাছে বিক্রি করে বাংলাদেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয় এনটিটি ডোকোমো।
রবি আজিয়াটার জিএসএম ৯০০, ১৮০০ ও ২১০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের স্পেক্ট্রাম রয়েছে। আজিয়াটা তার সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান ইডটকোর মাধ্যমে ১৩ হাজার ২০০টিরও বেশি টাওয়ার পরিচালনা করে। যদিও বর্তমানে ইডটকো একটি পরিপূর্ণ কোম্পানি হিসেবে পৃথতভাবে এ দেশে টাওয়ার কো. হিসেবে ব্যবসা পরিচালনা করছে।
৩.২.১ রবি আজিয়াটার রাজস্ব এবং ইবিআইটিডিএ
সারণি ৭ -এ দেখা যাচ্ছে, ২০১৭ সালে রবি আজিয়াটার প্রবৃদ্ধি ও মুনাফা ৬ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা বেড়ে ২০২৩ সালের মধ্যে ৯ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। ২০১৮ সালে ফোর-জির বিস্তার বাড়ায় রবির প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমেছে। ইবিআইটিডিএ মার্জিন ২০১৭ এবং ২০২৩ এর মধ্যে ১৯ থেকে ৪৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং প্রতিযোগিতার তীব্রতা সত্ত্বেও বাজারের শীর্ষস্থানীয় অবস্থানে রয়েছে। রবির স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর হার মাত্র ৫০ শতাংশ এবং এটি ভয়েস ও এসএমএস থেকে শুরু করে ডাটা পর্যন্ত রাজস্ব আয়কে ত্বরান্বিত করছে। ২০১৭-২৩ মেয়াদে রবির ক্যাপেক্স-টু-সেলস রেশিও গড়ে ২৫ শতাংশ হয়েছে, যার মধ্যে বেশিরভাগ বিনিয়োগ ডেটা ব্যবহার বৃদ্ধিতে সহায়তা এবং ফোর-জি নেটওয়ার্ক কাভারেজ ও সক্ষমতা বাড়ানোর দিকে মনোনিবেশ করেছে। ২০২৩ সালে ফোর-জি বিস্তারের পর ২০১৯ সাল থেকে রবির ক্যাপেক্স কমেছে।
সারণি ৭ – রবি আজিয়াটা রাজস্ব এবং ইবিআইটিডিএ মিক্স, ২০১৭-২০২৩
৩.৩ বাংলালিংক
বাংলালিংক ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ভিওন গ্রুপের একটি সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান যা সেবা টেলিকম নামে পরিচিত ছিল। ২০০৪ সালে ওরাসকম টেলিকম সেবার শতভাগ শেয়ার কিনে নেওয়ার পরে ২০০৫ সাল থেকে বাংলালিংক নামে কার্যক্রম শুরু করে। বাংলালিংক বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম সেলুলার সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান।
এটি ওরাসকম টেলিকমের সম্পূর্ণ মালিকানাধীন সহায়ক সংস্থা হিসাবে কাজ করার পরে ২০১০ সালে ভিম্পেলকম একে অধিগ্রহণ করার পর ২০১৭ সালে ভিওন নামকরণ করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৮ সালে ফোর-জি নেটওয়ার্ক চালু করে এবং ২০২২ সালের শেষ নাগাদ এর ৩ কোটি ৭০ লাখ গ্রাহকের ৪০ শতাংশের ওপরে গ্রাহক এই ফোরজি ব্যবহার করেছে। এর রাশিয়ান অংশ বিক্রির পর ইবিআইটিডিএ খাতে প্রায় ১৩ শতাংশ এবং মার্কিন ডলারের হিসাবে ১৫ শতাংশ ভিওন গ্রুপের রেভিনিউতে অবদান রেখেছে বাংলালিংক। প্রতিষ্ঠানটি অন্য দুই প্রতিযোগীর মতো রেসিডেনশিয়াল ফিক্সড ব্রডব্যান্ড সেবা প্রদান করে না।
৩.৩.১ বাংলালিংক রেভিনিউ ও ইবিআইটিডিএ মিক্স
বাংলালিংক ২০১৭ থেকে ২০১৮ সালে কঠিন সময় পার করে। এর রাজস্ব নেমে আসে প্রায় বছরান্তে ৪ দশমিক ৬ এবং ৬ দশমিক ১ শতাংশে। কিন্তু ২০২৩ সালে এটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬১ দশমিক ৫ বিলিয়ন টাকায়। বাংলালিংক তার রাজস্ব মিশ্রণ লিগেসি ভয়েস এবং এসএমএস থেকে দ্রুত ডাটায় স্থানান্তর করছে। বাংলালিংক ৩ হাজার মোবাইল টাওয়ার বিল্ড প্রোগ্রামের মাধ্যমে মোবাইল কভারেজ বাড়ানোর পরে ২০২৩ সাল থেকে ক্যাপেক্স টু সেলস রেশিও ১৮ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। সারণি ৮-এ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি ২০১৮ সালে পতনের পর ইবিআইটিডিএ প্রায় ৩৮ শতাংশে অবস্থান করছে।
সারণি ৮ – বাংলালিংক রাজস্ব এবং ইবিআইটিডিএ মিশ্রণ, ২০১৭-২০২৩
আগের পর্বগুলো-
পর্ব-১: https://www.infotechinsight.com/tech-talk/news/139
পর্ব- ২: https://www.infotechinsight.com/tech-talk/news/142
পর্ব-৩: https://www.infotechinsight.com/tech-talk/news/144
পর্ব-৪: https://www.infotechinsight.com/tech-talk/news/233
পর্ব-৫: https://www.infotechinsight.com/tech-talk/news/294
এমএএইচ