সোমবার; ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪; ৮ পৌষ ১৪৩১

বিজ্ঞাপন থেকে টিউশন এখন অ্যাপে

বিজ্ঞাপন থেকে টিউশন এখন অ্যাপে

-ইনফোটেক ইনসাইট রিপোর্ট

Published : ১৮:০৫, ৪ জুন ২০২৪

দেশের রাজধানী-সহ ব্যস্ত শহরগুলোতে মানসম্পন্ন টিউটর এবং ভালো টিউশন পাওয়াটা বরাবরই চ্যলেঞ্জিং। পেশাটি প্রাতিষ্ঠানিক না হওয়াতে মান নির্ণয়ের কোনও সুযোগ থাকে না উভয় পক্ষেরই। পাশাপাশি টিউশনের পরিবেশ নিরাপদ কি না তা নিয়ে তো সংশয় থাকেই। জবাবদিহির কোনও জায়গা না থাকায় প্রতারণা করারটাও সহজ এই সেক্টরে। সময়ের সঙ্গে ইন্টারনেট এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া সম্ভব হয়েছে এই টিউশন পরিষেবাকে। বাংলাদেশে এই পরিষেবায় অগ্রদূত হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে কেয়ারটিউটরস নামে একটি প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি তাদের এক যুগ পূর্ণ হওয়ায় টিউশন পরিষেবার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা এবং কার্যনির্বাহী প্রধান মাসুদ পারভেজ রাজু।

এক যুগে কী পরিবর্তন এনেছেন?

মাসুদ পারভেজ রাজু: এক সময় মানুষ টিউশনের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিত। রাস্তায় রাস্তায় পোস্টার লাগাত আর এখন এই কাজটিই তারা করছে অ্যাপের মাধ্যমে। এই পরিষেবাকে আমরা একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পেরেছি। আমাদের এখানে টিউটরদের মান যাচাই করা হয়। ফলে এখানে প্রতারণার কোনও সুযোগ নেই। সেই সঙ্গে নিরাপত্তার দিকটিও অনেকাংশে নিশ্চিত হয়। এ পর্যন্ত আমাদের ওয়েবসাইট যুক্ত হয়েছে ৩ লক্ষের বেশি টিউটর এবং আমাদের অ্যাপ ডাউনলোড হয়েছে দেড় লক্ষাধিকেরও বেশি। আমাদের এই প্ল্যাটফর্ম থেকে এখন পর্যন্ত দেশের ১২টি শহরের থেকে ১ লাখের ওপরে অভিভাবক এবং শিক্ষার্থী টিউটর খুঁজে নেয়ার চেষ্টা করেছেন। বর্তমানে আমাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে ১৩ ক্যাটাগরিতে টিউটররা টিউশন খুঁজে নিতে পারেন।

কিভাবে এই পরিষেবা সবার জন্য নিরাপদ এবং বিশ্বস্তভাবে উপস্থাপন করলেন?

মাসুদ পারভেজ রাজু: কোনও পরিষেবাকে যখন সম্পূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া যায় তখন সেটাকে বিশ্বস্ত ও নিরাপদ করা অনেক সহজ হয়ে যায়। আমাদের এখানে টিউটর এবং অভিভাবক প্রত্যেককেই যাচাইকরণের কয়েকটি ধাপ পার করে সদস্য হতে হয়। আমাদের প্ল্যাটফর্মে জাতীয় পরিচয় পত্র এবং ঠিকানা যাচাইকরণ ছাড়াও শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং বিভিন্ন ব্যক্তিগত তথ্য যাচাই করেই এখানে অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই করে নিতে হয়। নারী টিউটররা যেন নিরাপদ থাকেন সেজন্যও রয়েছে আলাদা নিয়ম। তাই আমাদের এই যাচাই প্রক্রিয়ার কারণে প্রতারণা বা নিরাপত্তা নিয়ে কোনও সমস্যা হয় না।

তারমানে এই পরিষেবা ব্যবহার করাকেই যথেষ্ট প্রয়োজনীয় বলে মনে করছেন?

মাসুদ পারভেজ রাজু: অবশ্যই। কেননা, শহর এলাকায় কেউ কাউকে চেনে না। আবার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমাজে নানারকম প্রতারণাও বাড়ছে। আর এই সুযোগে অভিভাবকরা অনেক সময় ভুয়া টিউটরের খপ্পড়ে পড়েন। এমনও হয়েছে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুয়া আইডি কার্ড বানিয়ে দেদার টিউশন করে যান অনেকে। অপরদিকে টিউটররাও পড়েন নানা সমস্যায়। অনেক সময় তাদের অনেক ধরনের হয়রানির মুখে বা বিপদেও পড়তে হয়। এমনও ঘটেছে যে একজন নারী টিউটর পড়াতে গিয়ে দেখে সেই বাসায় কোনও শিক্ষার্থীই নেই। আবার যে যে-ই এলাকায় থাকে সেই এলাকায় টিউশনও পায় না। তাই বর্তমান সময় এবং পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে একটি প্রাতিষ্ঠানিক পরিষেবার মাধ্যমে টিউশন ও টিউটর খুঁজে নেয়াটা আমি সঠিক বলে মনে করি

বেকার সমস্যা সমাধানে এটি কেমন কার্যকর হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

মাসুদ পারভেজ রাজু: বেকার সমস্যা সমাধানে এটি কেমন কার্যকর ভূমিকা পালন করছে তা আপনি এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা দেখলেই বুঝতে পারবেন। আমাদের দেশে পার্ট টাইম চাকরির সুযোগ তেমন নাই বললে চলে; যা আছে তা সময় বেশি এবং আয় কম বলে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা করতে পারেন না। তাই টিউশন আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো একটি পার্টটাইম কাজ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কেয়ারটিউটরসের কল্যাণে। আর বর্তমানে যেহেতু জীবন যাত্রার ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে তাই অনেকে একমাত্র আয় দিয়ে ভালো করে জীবন যাপনের ব্যয় নির্বাহ করতে পারছেন না, আবার আমাদের দেশে দ্বিতীয় আয়ের উৎস বা সুযোগ দুটোই খুব কম; তাই অনেকের ক্ষেত্রে আয়ের দ্বিতীয় উৎস হিসেবে টিউশন যথেষ্ট কার্যকর একটি ভূমিকা পালন করছে। আবার কেউ কেউ ফুল টাইমও শুধু টিউশনি করে জীবন নির্বাহ করছেন।

কোন বয়স বা শ্রেণির মানুষ এই পেশায় আসছে?

মাসুদ পারভেজ রাজু: এক কথায় সব বয়সের এবং বিভিন্ন শ্রেণির মানুষই এই পেশায় আসতে শুরু করেছে। মূলত নিরাপদ এবং বিশ্বস্ত হওয়ার কারণে দিন দিন মানুষের আমাদের প্ল্যাটফর্মের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। আমাদের পরিসংখ্যান থেকে বলতে পারি, এখানে ৭০ শতাংশ ব্যবহারকারীই রয়েছে ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সের ভেতরে। আর শ্রেণি বলতে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন সেক্টরের চাকরিজীবী, গৃহিণী, অবসরপ্রাপ্তরাও আমাদের প্ল্যাটফর্মে যুক্ত রয়েছেন।

দেশের বাইরে থেকে কোনও সাড়া পাওয়া যায়?

মাসুদ পারভেজ রাজু: বেশ ভালো। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসীরা তাদের সন্তানদের আরবী এবং বাংলা পড়ানোর ক্ষেত্রে সেখানে যেমন ভালো শিক্ষক পান না আবার পেলেও খরচে কুলাতে পারেন না। তাদের জন্য আমাদের প্ল্যাটফর্ম আশীর্বাদ এবং ন্যায্য বেতনের মধ্যে তারা অনলাইন টিউটর খুঁজে নিতে পারছেন। আবার মধ্যপ্রাচ্যে অনেক বাংলা স্কুল রয়েছে। সেখানকার কমিউনিটির মানুষরাও এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বাংলাদেশি টিউটরদের দিয়ে তাদের সন্তানদের পড়াচ্ছেন। অর্থাৎ এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে রেমিটেন্স আসার রাস্তাটিও বড় হচ্ছে। দেশের বাইরে যে শিক্ষার্থীরা আছেন তারা হোয়াটসঅ্যাপ, গুগল মিট অথবা জুম দিয়ে দেশের টিউটরদের কাছে পড়ছেন।

আপনাদের পরিষেবায় আর কি কি ধরনের সুবিধা রয়েছে?

মাসুদ পারভেজ রাজু: আমাদের এই প্ল্যাটফর্ম এখন আগের তুলনায় অনেক অনেক ভালো ফিচার সমৃদ্ধ। এটি এখন সম্পূর্ণ একটি টিউটর এবং টিউশন ম্যানেজমেন্ট প্ল্যাটফর্ম। কেননা এর মাধ্যমে এখন পুরো টিউশন ব্যবস্থাকেই ম্যানেজ করা যাচ্ছে। উপরে নিরাপত্তা এবং বিশ্বস্ততার যে বিষয়গুলো বলেছি সেগুলো ছাড়াও অভিভাবকরা এই অ্যাপটি দিয়ে এখন টিউটর কখন বাসায় আসছেন আর কখন বাসা থেকে যাচ্ছেন এইগুলো মনিটর করতে পারছেন। যেমন একজন টিচার মাসে তার ছাত্রকে কতদিন পড়িয়েছেন এবং প্রতিদিন কতক্ষণ করে পড়াচ্ছেন এই সংক্রান্ত যাবতীয় রিপোর্ট অভিভাবকের অ্যাপে চলে যাচ্ছে। অপরদিকে অনেক অভিভাবক রয়েছেন যারা টিউটর নিয়োগ দেয়ার দুএক মাস পরেই বিদায় করে দেয়। তখন টিউটররা আর্থিকভাবে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হন; এই পরিস্থিতিতে তাঁদের ক্ষতি কমাতে কাজ করছে আমাদের প্রতিষ্ঠান।

 

এমএএইচ

শেয়ার করুনঃ