বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতের বাজার ২০১৭-২০৩১
Published : ১২:২৬, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪
আমিনুল হাকিম আম্বার আইটি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইআইজিএবি) বর্তমান সভাপতি। এর আগে তিনি দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি-তে একাধিকবারের সভাপতি ছিলেন। দীর্ঘদিন টেলিযোগাযোগ খাতে কর্মরত থাকায় কাছ থেকে দেখেছেন এই সেক্টরের যাত্রা, ক্ষেত্র তৈরি, উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ইত্যাদি। ভবিষ্যত গতিপথও তিনি দেখতে পাচ্ছেন। সেসব তিনি তুলে ধরছেন ধারাবাহিকভাবে টেকটক বিভাগে। আজ পঞ্চম পর্ব।
টেলিকম অপারেটরদের প্রোফাইল-
৩.১ গ্রামীণফোন
গ্রামীণফোন বাংলাদেশের জিএসএম (গ্লোবাল সিস্টেম অব মোবাইল কমিউনিকেশন) ভিত্তিক সেলুলার অপারেটর। এটি ১৯৯৭ সালে কার্যক্রম শুরু করে। এর মালিকানার ৫৫ দশমিক ৮ শতাংশ টেলিনরের, গ্রামীণ টেলিকমের ৩৪ দশমিক ২ শতাংশ এবং অবশিষ্ট ১০ শতাংশ জনসাধারণের মালিকানাধীন। গ্রামীণফোন বাংলাদেশের বৃহত্তম এবং দ্রুত বর্ধনশীল সেলুলার টেলিফোন নেটওয়ার্ক। ২০২৩ সালের শেষে এর গ্রাহক সংখ্যা ছিল প্রায় ৮ কোটি ৩০ লাখ। গ্রামীণফোনের ঘোষিত লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশে সাশ্রয়ী ও মানসম্পন্ন সেলুলার তথা মোবাইল সেবা প্রদান করা। গ্রামীণফোন দেশের গ্রামীণ এলাকাসহ সারাদেশে মোবাইল ফোন সুবিধা দিয়ে থাকে। টেলিকম কোম্পানিটি গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ মডেল থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এমন একটি ব্যবসায়িক মডেলের ধারণা তৈরি করেছিল যেখানে একটি মোবাইল ফোন আয়ের উৎস হিসেবে কাজ করতে পারে। পল্লীফোন কর্মসূচি আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে ত্রিপক্ষীয় (জিপি-জিটিসি-জিবি) একটি ভালো প্রচেষ্টা। প্রতিষ্ঠানটির পল্লী ফোন দেশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে আধুনিক টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদান করে। যাকে একটি অনন্য ধারণাই বলা যায়। পল্লীফোনের গ্রাহক হতে হলে প্রথমে গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য হতে হয়। এসব মোবাইল ফোনের বিলিং রেট খুবই সস্তা এবং গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ঋণও দেওয়া হয় এজন্য। গ্রাহককে একবার একটি ফোন দেওয়া হলে তাকে আউটগোয়িং এবং ইনকামিং উভয় কলই কাভার করে সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকদের পরিষেবা দিতে উৎসাহিত করা হয়। এর মাধ্যমে গ্রাহক ব্যাংক ঋণ পরিশোধের পাশাপাশি অর্থ উপার্জনও করতে পারেন। বাংলাদেশের গ্রামীণ জনপদের অনেক মানুষ, বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত নারীরা পল্লীফোনের সাহায্যে জীবনমান পরিবর্তন করতে পেরেছেন। গ্রাহক, রাজস্ব, মোবাইল টাওয়ার, স্পেকট্রাম পোর্টফোলিও, দীর্ঘ দূরত্ব এবং মেট্রো ফাইবার ফুটপ্রিন্টের দিক থেকে গ্রামীণফোন সবচেয়ে বড় মোবাইল নেটওয়ার্ক পরিচালনা করছে।
৩.১.১ গ্রামীণফোনের রাজস্ব ও ইবিআইটিডিএ মিক্স
ধারাবাহিক বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হিসাবে ২০১৭-২৩ সময়কালে গ্রামীণফোনের রাজস্ব বার্ষিক গড় ৪ দশমিক ৯ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো ১৫৬ বিলিয়ন টাকা ছাড়িয়ে যায়। গ্রামীণফোন বিশ্বব্যাপী ইন্ডাস্ট্রি লিডারদের মধ্যে তার ইবিআইটিডিএ ( ) মার্জিন ৬১ শতাংশরও বেশি বাড়িয়েছে, ক্যাপেক্স বিনিয়োগের গড় ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ যা এই অঞ্চলের প্রতিযোগীদের তুলনায় কম। গ্রামীণফোনের উচিত এফটিটিএইচ, ফাইবার অপটিক্যাল নেটওয়ার্কে বিনিয়োগ শুরু করা। সারণি ৬-এ পণ্য বিভাগ অনুযায়ী গ্রামীণফোনের আয় তুলে ধরা হয়েছে। টেলিনরের বিনিয়োগের ফলে গ্রামীণফোন মাঝারি নেটওয়ার্ক বিনিয়োগ সত্ত্বেও নতুন উদ্যোক্তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পেরেছে এবং ৬০ শতাংশ ইবিআইটিডিএ মার্জিন বজায় রেখেছে, ২০১৯ সাল থেকে এর ক্যাপেক্স ও সেলস অনুপাত ১৩ শতাংশরও কম।
সারণি ৬- গ্রামীণফোন রেভিনিউ এবং ইবিআইটিডিএ এর ইতিহাস ২০১৭-২০২৩
২০১৬ সাল থেকে মোবাইল রাজস্ব আয় স্থবির হয়ে থাকায় ফিক্সড ব্রডব্যান্ডের সঙ্গে গ্রামীণফোনের রাজস্ব মিশ্রণ ধীরে ধীরে বিকশিত হচ্ছে, যা চিত্র ১০-এ দেখানো হয়েছে। ২০২৩ সালে গ্রামীণফোন মোবাইল থেকে আয় হয়েছে ৮৯ শতাংশ এবং রাজস্বের ৯৫ শতাংশ। ফিক্সড ব্রডব্যান্ড গ্রামীণফোনের জন্য একটি বিশাল সুযোগ এবং ব্রডব্যান্ড জেনারেশনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং উদীয়মান মধ্যবিত্ত শ্রেণির চাহিদা পূরণে ফাইবার সেবা প্রদান করতে পারে।
চিত্র ১০- গ্রামীণফোন রেভিনিউ মিশ্রণ – ২০১৭-২০২৩
সূত্র: কোম্পানি রিপোর্ট, আইএডেম ইস্ট রিসার্চ
এমএএইচ