সোমবার; ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪; ৮ পৌষ ১৪৩১

বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতের বাজার ২০১৭-২০৩১

বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতের বাজার ২০১৭-২০৩১

আমিনুল হাকিম

Published : ১৫:২৫, ১৮ আগস্ট ২০২৪

আমিনুল হাকিম আম্বার আইটি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইআইজিএবি) বর্তমান সভাপতি। এর আগে তিনি দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি-তে একাধিকবারের সভাপতি ছিলেন। দীর্ঘদিন টেলিযোগাযোগ খাতে কর্মরত থাকায় কাছ থেকে দেখেছেন এই সেক্টরের যাত্রা, ক্ষেত্র তৈরি, উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ইত্যাদি। ভবিষ্যত গতিপথও তিনি দেখতে পাচ্ছেন। সেসব তিনি তুলে ধরছেন ধারাবাহিকভাবে টেকটক বিভাগে। আজ দ্বিতীয় পর্ব।

এছাড়া ফাইবার অ্যাট হোমেরও রয়েছে এনটিটিএন লাইসেন্স। ফাইবার অ্যাট হোম ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে বিটিআরসি থেকে এনটিটিএন লাইসেন্স পেয়েছে। অপর এনটিটিএন বাহন লিমিটেড ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে লাইসেন্স পায়। এই তিনটা ছাড়া সরকারি লাইসেন্সধারীরা পাবলিকলি ব্যবসা করে না। সরকারি ৩টি এনটিটিএন প্রতিষ্ঠান হলো বিটিসিএল, পিজিসিবি ও বাংলাদেশ রেলওয়ে।

ফাইবার অ্যাট হোম, সামিট ও বাহন বিটুবি ব্যবসা করে। বিটিসিএল, পিজিসিবি ও বাংলাদেশ রেলওয়ে আইএসপি ও আইআইজি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কোনও ব্যবসা করে না। আমরা নির্দিধায় বলতে পারি, ফাইবার অ্যাট হোম ও সামিটের জন্য ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ইন্টারনেট পৌঁছে গেছে। এই দুটি প্রতিষ্ঠান না হলে দেশের প্রত্যন্ত গ্রামে-গঞ্জে ইন্টারনেট পৌঁছানো দুরূহ ছিল।

বাহন এই খাতে সবে প্রবেশ করেছ। ফাইবার অ্যাট হোম ও সামিট মেজর প্লেয়ার হিসেবে আছে মার্কেটে। তাদের আইটিসি ও আইআইজি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। দেশে ফিক্সড ব্রডব্যান্ডের ব্যবহারের হার বাড়াতে সামিটের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এটা অস্বীকার করা যাবে না।

বাংলাদেশে রেগুলেটরি অনিশ্চয়তার মধ্যে লাইসেন্স প্রদানের বাধ্যবাধকতা অবাস্তব না হলেও চ্যালেঞ্জিং। বিশ্বব্যাপী আর্থিক অনিশ্চয়তার ফলে একটি কঠিন ভূ-রাজনৈতিক ঝড় এবং সংশ্লিষ্ট আনুষ্ঠানিক সব আইন এবং তার বহিঃপ্রকাশ প্রকৃত বিনিয়োগকারীদের বাধা দেয়। দেশের টেলিকম রেগুলেটরি গভর্নেন্সের ব্যাপক আকারে পূণর্গঠনই বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে পারে। সেইসঙ্গে তা মোবাইল, ফিক্সড এবং আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথের প্রবাহিত বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।

আমরা মনে করি, এই ১৮৭ মিলিয়নের বেশি মোবাইল গ্রাহকের বাজারে মাত্র ২০ শতাংশ গ্রাহকের টাওয়ার ফাইবারাইজড। যেহেতু রেগুলেটর আনুষ্ঠানিকভাবে ডার্ক ফাইবার লিজ দেওয়ার অনুমতি দেয় কিন্তু অনানুষ্ঠানিকভাবে এটিকে আলোকিত করার জন্য নিষেধাজ্ঞাও দেয়, তাই  এটিতে শুধু ফাইবারযুক্ত টাওয়ারের ১০ ভাগের এক ভাগ এটি থেকে উপকৃত হয়।

উদাহরণ স্বরূপ, আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ) প্রকাশিত আইসিটি উন্নয়ন সূচক ২০১৭ সালে ১৭৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৪৭তম স্থানে রয়েছে। যেখানে সিঙ্গাপুর ১৮তম, ভিয়েতনাম ১০৮তম,  ইন্দোনেশিয়া ১১১তম ও কম্বোডিয়া ১২৫তম স্থানে রয়েছে।

সম্প্রসারিত কাভারেজ,  বৃহত্তর ক্রয়ক্ষমতা, পরিষেবার উন্নতি, বর্ধিত ডেটা ব্যবহার এবং স্মার্টফোন ব্যবহারের হার টেলিকম সেক্টরে প্রবৃদ্ধির প্রধান চালিকাশক্তি। দেশটি মূলধনী ব্যয় বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে ফাইবার-অপটিক নেটওয়ার্ক এবং ফোরজি কাভারেজ সম্প্রসারিত করে চলেছে। টেলিকম খাতে বিনিয়োগ ২০১৭-২৩ সালে বার্ষিক গড় ৪ দশমিক ৩ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।  ২০১৯ সালে বার্ষিক ৩২ শতাংশ হারে ধসের পরে টেলিকমিউনিকেশন পরিষেবা প্রদানকারীরা ২০২৪-৩১ সালে গড়ে ৩ দশমিক  হারে বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি বজায় রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ফিক্সড লাইনের সাবস্ক্রিপশন ছোট আকারের। প্রায় ০.৬ মিলিয়নে আটকে থাকে যখন ফিক্সড ব্রডব্যান্ড ধীরে ধীরে ২০২৩ সালে আনুমানিক ১৩ দশমিক ৭ মিলিয়ন সাবস্ক্রিপশনে নিয়ে যাচ্ছে যার মধ্যে বেশিরভাগই এফটিটিএইচ সংযোগ রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে দ্রুতগতির ইন্টারনেট প্রাথমিকভাবে ঢাকাসহ দেশের সব বিভাগীয় শহরাঞ্চলে পাওয়া যায়। প্রধান শহরগুলোর বাইরে দেশে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয় ধীর গতিতে, যা ব্যয়বহুলও। (চলবে)

পর্ব-১: https://www.infotechinsight.com/tech-talk/news/139

 

এমএএইচ

শেয়ার করুনঃ