.png)

ইন্টারনেটের দাম কমানোর আহ্বান ফয়েজ আহমদের, সতর্ক করলেন সবাইকে
Published : ২২:৫৪, ৯ মার্চ ২০২৫
সব পক্ষকে ইন্টারনেটের দাম কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদের তৈয়্যব। তিনি বলেছেন, ইন্টারনেটের দাম কমানোর জন্য সরকারের যেসব প্রতি এর সাথে সংশ্লিষ্ট সেসবেরও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আজ (রবিবার) জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন আয়োজিত প্রান্তিক পর্যায়ে দ্রুতগতির মানস্পন্ন ও সহজলভ্য ইন্টারনেট প্রাপ্তিতে করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আজকের দিনে টেলিকম খাত হলো সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রি। কিন্তু আমাদের দেশে সেটা নয়। কিন্তু সেটা হতে হবে। তিনি পলিসি রিফর্মের চেষ্টা করবেন বলে জানান।
এনটিটিএনের (ভূগর্ভস্থ ক্যাবল সেবা) বিরুদ্ধে সবার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা আমরা দেখবো কিভাবে সমস্যার সমাধান করা যায়। তিনি জানিয়ে দেন, এনটিটিএন কানেকশানের ওপর ব্যবসা করবে, ক্যাপাসিটির ওপর নয়। এটা লজ্জার যে, তাদের আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবলের চেয়ে ওভারহেড (ঝুলন্ত তার) ক্যাবল বেশি।
তিনি উল্লেখ করেন দেশে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের (আইএসপি) ব্রডব্যান্ড হতে হবে সর্বনিম্ন ২০ এমবিপিএস।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব দেশে স্টারলিংকের আগমন বিষয়ে বলেন, আমরা স্টারলিংকে দেশে নিয়ে আসবো। এফডিআইকে (বিদেশি বিনিয়োগ) ব্র্যান্ডিং করতে আমরা এটা করবো। যারা ইন্টারনেট সেবা দেন তাদেরকে সেবার মান ভালো করতেই হবে। তা না হলে আপনারা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন। তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে কম টাকায় ইন্টারনেট পাওয়া যায়, এটা সত্যি, কিন্তু মানের দিক থেকে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তান, সিরিয়ার চেয়েও আমরা পিছিয়ে আছি।
তিনি মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের জন্য ভয়েস ওভার ওয়াই-ফাই চালু করার কথা জানান। এই প্রযুক্তিতে যেখানে নেটওয়ার্ক পেতে সমস্যা সেখানে ওয়াই-ফাই সংযোগ ব্যবহারকারী মোবাইল ফোনে (তার অপারেটরে) কথা বলতে পারবেন।
দেশে মোবাইল সেটের ব্যবহার বাড়াতে কিস্তিতে মোবাইল বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, টেলিকম খাত ছিল বিগত সরকারের দুর্নীতির অন্যতম খাত। এই খাতে আমরা এখনও কোনও রিফর্ম দেখতে পাইনি। এটা দেখতে চাই। রিফর্ম কমিশনের জন্য জোর দাবি জানাই।
ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইআইজিএবি) সভাপতি আমিনুল হাকিম দেশে আক্টিভ শেয়ারিং অনুমোদন দেওয়ার আবেদন জানিয়ে বলেন, এটার অনুমতি দেওয়া হলে এমনিতেই দেশে ইন্টারনেটের দাম কমে যাবে।
বেসিস সহায়ক কমিটির চেয়ারম্যান রাফেল কবির বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ৫০-৬০ শতাংশ করভার এবং এনটিটিএনদের একচেটিয়া ব্যবসায়-ই হলো ইন্টারনেটের মূল্য বৃদ্ধির কারণ। এই দুটো কমালে ৫০ শতাংশ দাম কমানো সম্ভব।
টেলিকম খাত বিশেষজ্ঞ ও রবির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, এ খাতে রিফর্ম হলে তার প্রভাব সবার ওপরে পড়বে। আমাদের লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। অ্যাক্টিভ শেয়ারিং এবং প্যাসিভ শেয়ারিং অবশ্যই আমাদের লাগবে।
আইএসপিএবির সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, আইএসপি নিয়ে যে রিফর্ম হবে তাতে যেন সব লেয়ারই থাকে। কোনও আইএসপি যেন বের না হয়ে যায়। সবাই যেন ব্যবসা করতে পারে।
ই-কমার্স উদ্যোক্তা ফাহিম মাসরুর বলেন, ১০০ টাকা ডাটা (ইন্টারনেট) বিলের ৫০-৬০ শতাংশ কর দিতেই চলে যায়। তাহলে ডাটার দাম কমবে কিভাবে? প্রশ্ন করেন তিনি। তিনি এনবিআরকে দোষারোপ করে বলেন, এটা হচ্ছে মূল কালপ্রিট। নতুন প্রশাসন এখনও এনটিটিএনের মনোপলি ভাঙতে পারেনি। এটা ভাঙতে হবে। এটাতে কেউ হাত দিতে পারেনি।
বাংলালিংকের হেড অব করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি তাইমুর রহমান বলেন, অ্যাক্টিভ শেয়ারিং চালু থাকলে খরচ কমবে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, দেখা যায় একই কমপোনেন্ট আমরা তিন অপারেটর আমদানি করছি। যদি এই কমপোনেন্ট আমরা ভাগাভাগি করে ব্যবহার করতে পারতাম তাহলে খরচ অনেক কমে যেত।
প্লেক্সাস ক্লাউডের সিইও মোবারক হোসেন স্বাধীন ওয়াইফাই নিয়ে কাজ করেন। তিনি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট দিয়ে দেশের বিভিন্ন গ্রামে ওয়াই ফাই ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছেন। অনুষ্ঠানে তিনি তার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন।
এছাড়া অনুষ্ঠানে এনটিটিএন প্রতিষ্ঠান সামিট মিউনিকেশন্স ও ফাইবার অ্যাট হোম এবং বিভিন্ন আইএসপির শীর্ষ কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন।
এমএএইচ