২জি নেটওয়ার্কের সূর্যাস্ত ২০২৯ সালে?
Published : ১৫:১৯, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
হিটলার এ. হালিম
ফোরজি নেটওয়ার্কের উত্তুঙ্গ কালে এবং ফাইভ-জি আসি আসি করছে এমন সময়ে জানা গিয়েছিলো তৃতীয় প্রজন্মের নেওয়ার্ক বা থ্রিজি থাকছে না। এই নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়া হবে। সেই প্রক্রিয়াও এখন শেষের পথে। এরই মাঝে শোনা গেলো টুজি নেওয়ার্কও থাকবে না। ২০২৯ সালের মধ্যে এই নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণ বন্ধ (সানসেট) হয়ে যাবে।
এজন্য টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি ‘টুজি সানসেট’ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ২০২৯ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য একটি রোডম্যাপও তৈরি করেছে। প্রয়োজন হলে নির্ধারিত সময়ের আগেই এটা বাস্তবায়ন করা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
বিটিআরসি সূত্র বলছে, ফোরজি দিয়েই সব হবে। তখন আর ২জি প্রয়োজন হবে না। সে সময় শুধু শুধু অপারেটরগুলোর ২টি নেটওয়ার্ক বহন করার কোনও মানে হয় না। ফলে ২জিকে যেতেই হবে।
ওই সূত্র আর বলছে, অপারেটরগুলোকে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হবে। অপারেটরগুলো নিজেদের মতো করে কাজ করবে। তবে তাদের টাইম লাইনও বলে দেওয়া থাকবে। সেই অনুযায়ী দেখা যাবে, ২০২৯ সালের আগেই টুজি নেওয়ার্ক সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সূত্রের দাবি, ২জি বন্ধ হয়ে গেলে মোবাইল ফোনের গ্রাহক সেবার মান আরও ভালো হলে
টুজি তথা ফিচার ফোনের উৎপাদন, সংযোজন ও বাজারজাতকরণ কমিয়ে স্মার্ট ফোন বা ফোরজি ফিচার মোবাইল হ্যান্ডসেটের সংযোজন, উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ বৃদ্ধির নির্দেশ দিয়েছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।
এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা গত এপ্রিলে মোবাইল উৎপাদকদের কাছে পাঠিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। ওই একই চিঠিতে ফোরজি ফিচার ফোন উৎপাদনের প্রস্তাবিত লক্ষ্যমাত্রাও ঠিক করে দেওয়া হয়েছে, যা চলতি বছর থেকেই কার্যকর করতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিটিআরসির সাবেক একজন কমিশনার বলেছিলেন, মোবাইল উৎপাদকদের ফোরজি ফিচার ফোন সেট উৎপাদনে গুরুত্ব দিতে বলেছি। তিনি জানিয়েছিলেন, ফোরজি ফিচার ফোন সেটের দাম হতে পারে ৩ হাজার টাকা। ফোনগুলো ভোল্টি (ভয়েস ওভার এলটিই প্রযুক্তি) সমর্থিত হবে।
অপরদিকে মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট রিজওয়ানুল হক বলেন, এটা মোটেই লাভজনক হবে না।
ফোরজি ফিচার ফোন উৎপাদনের বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি বলছে, সরকার ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের মহাসড়কে মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং মোবাইল হ্যান্ডসেটের গুরুত্ব অপরিসীম। দেশে ইতোমধ্যে ৯৮ শতাংশ এলাকায় ফোরজি নেটওয়ার্ক বিস্তৃতি লাভ করেছে এবং তা ভোল্টি প্রযুক্তি ব্যবহারে সক্ষম। সারা দেশে বিস্তৃত ফোরজি নেটওয়ার্কের সুফল ভোগ করতে প্রয়োজন স্মার্টফোন বা ফোরজি ফিচার ফোন। কিন্তু বর্তমানে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী এখনও টুজি ফিচার ফোন ব্যবহার করছে বিধায় তারা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার এবং প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে দেশব্যাপী ফোরজি নেটওয়ার্কের মান উন্নয়নের পাশাপাশি স্মার্টফোন বা ফোরজি ফিচার ফোন সেটের ব্যবহার আরও বৃদ্ধি প্রয়োজন।
ওই কর্মশালায় (এপ্রিলে অনুষ্ঠিত) কমিশন এবং কমিশন সংশ্লিষ্ট সব স্টেক হোল্ডারের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এই কার্যক্রম (ফোরজি ফিচার ফোন উৎপাদন) গ্রহণের সুপারিশ প্রদান করে। সুপারিশে বলা হয়, টুজি ডিভাইসের পরিবর্তে এখনই স্মার্টফোন বা ফোরজি ফিচার ফোনের উৎপাদন শুরু করতে হবে এবং এর পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি করতে হবে।
জানা গেছে, স্মার্টফোন বা ফোরজি ফিচার মোবাইল হ্যান্ডসেটের ন্যূনতম উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২০২৫ সালে ১৫ শতাংশ, ২০২৬ সালে ৩৫ শতাংশ, ২০২৭ সালে ৬০ শতাংশ, ২০২৮ সালে ৮০ শতাংশ এবং ২০২৯ সালে ১০০ শতাংশ।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে ২০২৫ সালের জানুয়ারির পর থেকে দেশে ২জি ফিচার মোবাইল ফোন উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যাটারির সক্ষমতা ১৫০০ মিলি অ্যাম্পিয়ার আওয়ার এবং ফোনের স্ক্রিন সাইজ সর্বনিম্ন ২ দশমিক ৪ ইঞ্চি হতে হবে। এছাড়া যেসব মোবাইল ফোন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ওডিএম পদ্ধতিতে মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদন করছে ২০২৪ সালে তাদের মোট বাজারজাতকৃত মোবাইল ফোনের ন্যূনতম ৫ শতাংশ স্মার্টফোন বা ফোরজি ফিচার মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদন বা সংযোজন করতে হবে।
এমএএইচ