স্টার্টআপনামা পর্ব-১
Published : ১৩:৩৯, ৯ জুলাই ২০২৪
ব্যবসায় বা উদ্যোক্তা জগতে বেশি উচ্চারিত শব্দ বোধ করি স্টার্টআপ। কিন্তু আমাদের ক’জনের জানা- স্টার্টআপ কী। কোথাও এ সম্পর্কে বিশদ জানার সুযোগ কম। নিজের জানার আগ্রহ থেকে খোঁজখবর করতে গিয়ে পেলাম কিছু। ভাবলাম জানাটা শেয়ার করি সবার সঙ্গে। জানা গেছে, আমাদের দেশেই এখন স্টার্টআপের সংখ্যা ১ হাজার ২০০-এর বেশি। এরমধ্যে সফল স্টার্টআপের সংখ্যা হাতে গোনা। ব্যর্থ স্টার্টআপের সংখ্যা কত তা অবশ্য জানা যায় না। এমন কোনও পরিসংখ্যান কোথাও নেই। আসলে মানুষ তার ব্যর্থতার কথা বলতে চায় না।
সহজ স্টার্টআপ, জটিল ধারণা
স্টার্টআপ হলো সেসব উদ্যোগ বা ব্যবসা যা বিশ্বকে পরিবর্তন করতে চায়। সমাজের জন্য প্রয়োজন কিন্তু এখনও তৈরি হয়নি, এমন সব জিনিসই দিতে চায় স্টার্টআপের প্রতিষ্ঠাতারা। উদ্ভাবনী উদ্যোগের মাধ্যমে সমাজে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান খোঁজা হয়। স্টার্টআপকে সংজ্ঞায়িত করা যায় এভাবে- এমন সব নতুন প্রতিষ্ঠান যেগুলো ব্যতিক্রমী পণ্য ও সেবা গড়ে তোলে, সেসব পণ্য ও সেবা বাজারে নিয়ে আসে এবং গ্রাহকদের জন্য তারা এগুলো অপ্রতিরোধ্য এবং অপ্রতিস্থাপনযোগ্য করে তোলে।
উদ্ভাবনই হলো স্টার্টআপের প্রাণ বা মূল শক্তি। প্রচলিত পণ্যের বিভিন্ন সমস্যার প্রতিকার বের করা কিংবা একেবারে নতুন শ্রেণির পণ্য ও সেবা তৈরি করাই স্টার্টআপের লক্ষ্য। এটি প্রতিষ্ঠিত ধারণা ও ব্যবসার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়। এ কারণে অনেক স্টার্টআপ সংশ্লিষ্ট প্রচলিত শিল্পে ‘বাধা সৃষ্টিকারী’ হিসেবে পরিচিত।
আমরা এখন অনেক স্টার্টআপকেই খুব ভালোভাবে চিনি। যেমন- ফেসবুক, অ্যামাজন, অ্যাপল, নেটফ্লিক্স, গুগল- এগুলো সমন্বিতভাবে ‘ফ্যাং স্টকস’ নামে পরিচিত। এগুলো ছাড়াও উইওয়ার্ক, পেলোটন এবং বিয়ন্ড মিট নামের প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্টার্টআপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ইনভেস্টোপিডিয়ার মতে, স্টার্টআপের ফোকাস থাকে একটি পণ্য বা সেবার ওপর এবং এই পণ্য বা সেবা প্রতিষ্ঠাতারা বাজারে নিয়ে আসতে চায়। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠিত কোনও বিজনেস মডেল থাকে না। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো- ব্যবসার পরবর্তী ধাপে যেতে তাদের হাতে যথেষ্ট পরিমাণ মূলধন থাকে না। শুরুতে এসব প্রতিষ্ঠানের মূলধন যোগায় তাদের প্রতিষ্ঠাতারাই।
স্টার্টআপের জনপ্রিয়তা
‘স্টার্টআপ’ শব্দটি জনপ্রিয়তা লাভ করে ১৯৯০ -এর দশকে। তখন প্রযুক্তি এবং ইন্টারনেটভিত্তিক অনেক প্রতিষ্ঠান দ্রুততার সঙ্গে বাড়তে থাকে। সঙ্গে স্টার্টআপ ধারণাটিতে যুক্ত হয় নতুন মাত্রা। স্টার্টআপকে সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র বিবেচনা করে বিনিয়োগকারীরাও বেশ আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে আসে। কিন্তু যথাযথ ব্যবসায়িক ভিত্তি না থাকায় তখনকার অনেক নতুন প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বিনিয়োগকারীরা তাদের অর্থ তুলে আনতে ব্যর্থ হন। এ অবস্থায় যেন পড়তে না হয় সেজন্য বর্তমান সময়ে ব্যবসার খুঁটি-নাটি বিশ্লেষণে অনেক সময় দেন সংশ্লিষ্টরা।
স্টার্টআপ কীভাবে কাজ করে
উচ্চস্তরে অন্য যেকোনও প্রতিষ্ঠানের মতোই কাজ করে স্টার্টআপ। এক্ষেত্রে একদল কর্মী কোনও একটি পণ্য তৈরির জন্য একসঙ্গে কাজ করে, যা ক্রেতারা ভবিষ্যতে কিনবে। অন্য ব্যবসার সঙ্গে এর মূল পার্থক্য, স্টার্টআপের কাজের ধরনে। প্রচলিত প্রতিষ্ঠানগুলো আগের ধারা অনুকরণ করে। কিন্তু স্টার্টআপ সম্পূর্ণ নতুন ধারার সৃষ্টি করে।
গতি এবং প্রবৃদ্ধির জন্য স্টার্টআপের লক্ষ্য:
আরেকটি মূল বিষয় অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে স্টার্টআপকে পৃথক করেছে। সেটা হলো- গতি এবং প্রবৃদ্ধি। আইডিয়ার ওপর ভিত্তি করে স্টার্টআপগুলো খুব দ্রুত সবকিছু তৈরির লক্ষ্য স্থির করে। নানা প্রতিক্রিয়া এবং ব্যবহারকারীদের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তারা পণ্যের নিয়মিত উন্নয়ন ঘটাতে থাকে। বাজারে যাওয়ার আগ পর্যন্ত একটি পণ্যের বার বার পরীক্ষা ও ত্রুটি সংশোধন পর্যায় চালিয়ে যায় স্টার্টআপগুলো।
এসব প্রতিষ্ঠান যখন কোনও পণ্য তৈরি করতে থাকে তখনই দ্রুততার সঙ্গে ক্রেতা তৈরির প্রতিও মনোযোগী হয়। বাজারের একটি বড় অংশ দখলে সহায়তা করে এই প্রক্রিয়া। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক অর্থ উপার্জনে সক্ষম হয় এবং পরবর্তীকালে তাদের পণ্যের চাহিদা আরও বেড়ে যায়।
স্টার্টআপের অর্থ আসে কীভাবে?
স্টার্টআপগুলো সাধারণত কয়েকটি ধাপে অর্থ সংগ্রহ করে থাকে। প্রথম রাউন্ডটিকে বলা হয় ‘বুটস্ট্র্যাপিং’। এই ধাপে প্রতিষ্ঠাতারা নিজেরা, তাদের বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যরা ব্যবসায় বিনিয়োগ করে। দ্বিতীয় ধাপটির নাম ‘সিড ফান্ডিং’। এখানে প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক স্তরে বিনিয়োগ করে সম্পদশালী একক ব্যক্তি।
এরপর আসে যথাক্রমে ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’ এবং ‘ডি’ ফান্ডিং রাউন্ড। এই ধাপগুলোতে প্রাথমিকভাবে ভেঞ্চার ক্যাপিটালের নেতৃত্বে বিনিয়োগ হয়ে থাকে। এ বিনিয়োগ হয় শত শত মিলিয়ন ডলার।
সবশেষে একটি স্টার্টআপ ‘পাবলিক কোম্পানিতে’ও পরিণত হতে পারে। এক্ষেত্রে সেই কোম্পানি সরাসরি কোনও স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হতে পারে। এই ধাপে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করতে পারে যে কেউ। এ সময় স্টার্টআপের প্রতিষ্ঠাতারা কিংবা শুরুর দিকের বিনিয়োগকারীরা তাদের শেয়ার বিক্রি করে বড় অংকের লাভ করে থাকে।
এমএএইচ