ফ্রিল্যান্সিংয়ে ভালো করছে কোন দেশ, বাংলাদেশের অবস্থান কত?
Published : ১৮:১৭, ৭ জুলাই ২০২৪
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি খাতে ফ্রিল্যান্সিং এখন একটি জনপ্রিয় পেশা। দেশে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান না থাকায় দিনে দিনে জনপ্রিয় হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। কিন্তু সম্ভাবনাময় এই পেশায় কতোটা এগিয়েছে বাংলাদেশ? যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ম্যাগাজিন সিইও-ওয়ার্ল্ড সম্প্রতি ফ্রিল্যান্সিং কাজে সেরা ৩০টি দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে। এই তালিকায় ২৯তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ম্যাগাজিনটি মূলত বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রকাশিত নানা তথ্য ও প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে কোন দেশের ফ্রিল্যান্সারদের চাহিদা বেশি, তা নিয়ে তালিকা প্রস্তুত করেছে।
তালিকায় সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়ে প্রথম অবস্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের মানদণ্ডের হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র পেয়েছে ৯৭ দশমিক ৪৬ নম্বর। দেশটির ফ্রিল্যান্সারদের চাহিদা সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি। পরবর্তী অবস্থানে রয়েছে ভারত। ভারতের প্রাপ্ত নম্বর ৯৫ দশমিক ৭১। আর ৯৪ দশমিক ৮১ নম্বর নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য। এরপরের তালিকায় ফিলিপাইন, ইউক্রেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, পোল্যান্ড, ব্রাজিল ও পর্তুগাল ইত্যাদি দেশগুলো রয়েছে। শেষের দিকে রয়েছে চীন, অবস্থান ২২তম। এরপর পাকিস্তানের অবস্থান ২৮ ও বাংলাদেশের অবস্থান ২৯তম। কাজের ধরন, ফ্রিল্যান্সারদের দক্ষতা, আর্থিক অবস্থানসহ প্রযুক্তিগত সক্ষমতার বিষয় মিলিয়ে বিভিন্ন দেশের জন্য এমন স্কোর দিয়েছে ম্যাগাজিনটি।
বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকার কারণ
তালিকায় বাংলাদেশের এমন অবস্থান নিয়ে জানা গেলো অন্যে তথ্য। ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অবস্থানে। কিন্তু কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কর্মীরা বেশ পিছিয়ে রয়েছে। দেশের ফ্রিল্যান্সাররা অল্প পারিশ্রমিকের কাজ বেশি করেন। অন্যদিকে গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইনের মতো কাজের বাজারে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। কারিগরি সেক্টরে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের উপস্থিতি তুলনামূলক কম। এখনও সেই ঘণ্টাপ্রতি পাঁচ থেকে সাত ডলারেরর কাজ নিয়েই সবাই প্রতিযোগিতা করছেন।
বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের সঠিক সময়ে কাজ সম্পন্ন না করার প্রবণতা আছে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভাষাগত দুর্বলতা থাকার কারণে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের আবেদনই গ্রহণ করা হয় না। এসব দক্ষতা না বাড়ানোর কারণে আমরা তালিকার পেছনে আছি। ফ্রিল্যান্সারদের মাঝে কারিগরি ও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে প্রশিক্ষিত করে আমরা তালিকায় এগিয়ে যেতে পারি।
যেসব দেশের চাহিদা ভালো
তালিকা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের ফ্রিল্যান্সারদের চাহিদা অন্যান্য দেশের চেয়ে বেশি। বিভিন্ন শিল্পখাতে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষ ফ্রিল্যান্সারের চাহিদা রয়েছে অনেক। ইংরেজি ভাষা, উন্নত পেশাদারী মনোভব ও দক্ষতা এসব কারণে যুক্তরাষ্ট্র ফ্রিল্যান্সারদের চাহিদা অনেক ভালো। দেখা যায় বিভিন্ন মার্কিন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের এক-তৃতীয়াংশের বেশি ফ্রিল্যান্সার। আবার ভারতও গোটা বিশ্বের ফ্রিল্যান্সার– বাজারে সেরা একটি কর্মী সরবরাহকারী দেশ। ভারতীয়দের ইংরেজিতে দক্ষতার জন্য তাঁদের চাহিদা অনেক বেশি। ভারতে দেড় কোটির বেশি ফ্রিল্যান্সার যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়াসহ এশিয়ার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কাজ করে যাচ্ছে।
ম্যাগাজিনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে প্রায় ১৫৭ কোটি ফ্রিল্যান্সার আছে। এই সেক্টরটির মার্কেট ভ্যাল্যু এখন ৩৩৯ কোটি ডলার। গত বছর শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রিল্যান্সাররাই অতিরিক্ত ১০ কোটি ডলার উপার্জন করেছেন। ফ্রিল্যান্সাররা গড়ে ঘণ্টাপ্রতি আয় করেন ২১ ডলার। এদিকে ইন্টারনেট ভিত্তিক ব্যাংকিং পরিষেবা প্রতিষ্ঠান পেওনিয়ারের হিসেবে, এশিয়া অঞ্চলের ৮২ শতাংশ ফ্রিল্যান্সারের বয়স ৩৫ বছর বা তার নিচে। উত্তর আমেরিকার অর্ধেক ফ্রিল্যান্সারের বয়স ৩৫ বছরের নিচে। সব মিলিয়ে বিশ্বের প্রায় ৭০ শতাংশ ফ্রিল্যান্সারের বয়স ৩৫ বা তার নিচে। গুরুত্বপূর্ণ একি তথ্য হলো বিশ্বব্যাংকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী প্রায় অর্ধেক পেশাজীবী বা কর্মী এখন ফ্রিল্যান্স পেশার সঙ্গে যুক্ত।
এমএএইচ