তানভীরের কোম্পানির নিবন্ধন যুক্তরাষ্ট্রে, কাজ করেন দেশে
Published : ১৮:১৯, ২০ জুন ২০২৪
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি প্রতি মাসে তিনি আয় করেন পাঁচ লাখ টাকা। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ইনোভেশন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ বিভাগে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তানভীর সুরুজ এরই মধ্যে পেশাগত সাফল্য পেয়েছেন। ফ্রিল্যান্সিং এর পাশাপাশি এখন তিনি উদ্যোক্তা।
ছোটবেলা থেকেই তানভীরের শখ কম্পিউটার ও গেমসের প্রতি। সেখান থেকেই ফ্রিল্যান্সিং শুরু তাঁর। একসময় তানভীরের মোবাইল ফোন ও কম্পিউটারে গেমস খেলে সময় কাটলেও এখন অনলাইনে নিজের কোম্পানি খুলেছেন এবং ন্যূনতম মাসিক আয় পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার। টাকার হিসাবে যা পাঁচ লাখের বেশি।
সপ্তম শ্রেণিতে পড়া অবস্থাতেই তথ্যপ্রযুক্তির নানা বিষয়ে দক্ষ হয়ে উঠেন তিনি। ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে তিনি পরিচিত হন গ্রাফিক ডিজাইন ও ডিজিটাল মার্কেটিং এর সঙ্গে। এরপর এসব বিষয়ে নিজের দক্ষতা বাড়ানো শুরু করেন তিনি।
তানভীরের জন্ম ২০০৩ সালের ২৮ অক্টোবর। বাড়ি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায়। বাবা মুনসুর আলী একজন কৃষক। নিজের জমিতে চাষাবাদ করেন। মা নুরুন নাহার গৃহিণী। দুই–ভাই বোনের মধ্যে তানভীর ছোট। বড় বোন বিউটি খাতুন মেহেরপুরে একটা প্রতিবন্ধী স্কুলের শিক্ষক।
দেশে অন্যান্য উদ্যমী তরুণদের মতো তানভীরও ঝুঁকে পড়েন ফ্রিল্যান্সিংয়ের দিকে। শুরুতে বড় একটি সমস্যা ছিল বাবা-মাকে বুঝানো ফ্রিল্যান্সিং আসলে কী। কেননা তাদের ধারণা ছিল এসব করলে পড়াশোনার ক্ষতি হবে। এছাড়া মেন্টর না থাকাটাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল তার।
মাত্র ১৩ বছর বয়সে ২০১৬ সালে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ শুরু করেন তানভীর। ২০২০ সালে তিনি প্রথম আয় করেন। ফ্রিল্যান্সিংয়ে নিজের অবস্থান তৈরির পাশাপাশি পড়াশোনাও চলতে থাকে তার। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ঠিকানায় নিবন্ধন করে একটি অনলাইন কোম্পানি করেন তানভীর। প্রতিষ্ঠানটির নাম ইকমক্যারি এলএলসি। কোনো কোনো মাসে সেই প্রতিষ্ঠান থেকে ১৫ লাখ টাকারও বেশি আয় করেন তিনি। তাঁর প্রতিষ্ঠান মূলত বিদেশি গ্রাহকদের জন্য পণ্য গবেষণা, অনলাইন দোকান চালু করে দেওয়া, ই-কমার্স বিপণনসহ বিভিন্ন সেবা দিয়ে থাকে। আবার অ্যামাজন, ওয়ালমার্ট থেকে শুরু করে বিভিন্ন বড় ই–কমার্স সাইটেও পণ্য বিপণন করে তার কোম্পানি।
এবার নিজের প্রতিষ্ঠান চালু করার পর তিনি মনে করলেন ব্যবসা সম্পর্কে অনেক কিছু জানার আছে। সেই সঙ্গে ব্যবসার ক্ষেত্রে কমিউনিকেশন, মেন্টরিং এসবও তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠে। নিজের ও পরিবারের স্বপ্নপূরণের আশা নিয়ে শুরু করা এই ফ্রিল্যান্সিংকে তিনি আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চান। এজন্য তার প্রয়োজন হয় সম্পূর্ণ একটি ইকোসিস্টেমের। খোঁজাও শুরু করেন। এক সময় খবর পান ইনোভেশন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ বিভাগের কথা। সেখানে ভর্তি হন। এতে তার ব্যবসা আরও এগিয়ে যায়। এখন তার প্রতিষ্ঠানে অন্যরাও কাজ করছে।
তানভীর সুরুজের প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন তারই চার বন্ধু। সেই বন্ধুদের তিনি নিজেই প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এখন তার স্বপ্ন প্রতিষ্ঠানটিকে আরও বড় করে তোলা্ তরূণদের জন্য একটি কর্মসংস্থান করতে চান তিনি। সেখানে কাজ করবে শতাধিক মানুষ। নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে টার্গেট করেই এগিয়ে যেতে চান তিনি।
এমএএইচ